নারীর শ্রমে নারীর ঘামে ফলবতী বসুমতি

যদি ধরে নিই, আদি পিতা আদমের অস্থিরতা দূর করার জন্য তার সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন স্রষ্টা; তাহলে নির্মোহ বিচারের মানদণ্ডে নারীর গুরুত্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে কতটুকু- তা বিশ্লেষণের কোনো সুযোগ থাকে না।
নারী কেবল পুরুষের সেবায় নিমগ্ন থাকবে-এমন বিধান স্রষ্টা বাতলে দেননি। অন্তত কোনো ধর্মগ্রন্থে এ রকম নির্দেশনা নেই। বরং পুরুষের পাশাপাশি সব রকম কাজে নারীর স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
মানুষের মানবিক সত্ত্বার বিভাজন হয় না। কিন্তু সৃষ্টির অপার রহস্যের মধ্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে স্পষ্টতই চোখে পড়ে, নারী-পুরুষের মধ্যে রয়েছে আলাদা আলাদা সত্ত্বা।
তবে এই বিবেচনায় নারীকে পুরুষের চেয়ে ছোট বা পুরুষকে নারীর চেয়ে বড় করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বার বার।
এমনি একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন সমান পারিশ্রমিকের দাবিতে।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ১৫৮ বছর পর আবার ফিরে এসেছে ৮ মার্চ। বিশ্বজুড়ে আজ পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
দিবসের ভিড়ে আজকের দিনটা অনেকটা আলাদা। কারণ মানুষ হিসেবে একজন নারী পরিপূর্ণ অধিকারের দাবিতে সুদীর্ঘকাল যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, তারই সম্মানস্বরূপ আজ পালিত হচ্ছে নারী দিবস।
অন্তত একটা দিন গোটা বিশ্ব আলাদা করে মনে করে নারীরাই এই জগতের শক্তির উত্স আর প্রেরণা। আমাদের স্বীকার করে নিতে হয় ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ধারায় দেখা যায়, নারী কোনও অংশেই পুরুষের পেছনে ছিল না। ফ্রান্সের প্যারি কমিউন, ফরাসি বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক আন্দোলনসহ ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পুরুষের পাশেই নারীকে দেখা যায়।
কিন্তু, কাঙ্ক্ষিত দাবি নারী সমাজ অর্জন করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ ভাগ পারিশ্রমিক কম পায়। অপর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে শতকরা ৬৫ ভাগ।
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখায় যায়, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নামার ৩ বছর পর ১৮৬০ সালের এ দিনটিতেই নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিকুল পরিবেশে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কাজটি করতে তারা ব্যর্থ হন।
তারপর বিভিন্ন আন্দোলনের চেষ্টার ফলে ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়।
কিন্তু বাস্তবতা হল এই-বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের সিংহভাগ শ্রমজীবী নারী জানেন না আন্তর্জাতিক নারী দিবস কী এবং কেন?
তাত্ত্বিক কোনো হিসাব-নিকাষে না গিয়ে নিতান্ত ক্ষুন্নি বৃত্তির প্রয়োজনে পুরুষের পাশাপাশি রাত দিন পরিশ্রম করছেন নারী। তাদের শ্রমে ও ঘামে ফুল-ফলে সুশোভিত হচ্ছে আমাদের এই বসুমতি।
Related News

একুশে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা
এ বছরের একুশে পদক দেওয়া হবে শনিবার। বেলা ১১টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক হস্তান্তরRead More

যেকোনো আঘাত মোকাবিলার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যখনই দেশ এগিয়ে যেতে থাকে, যখন মানুষ ভালো থাকার স্বপ্ন দেখতেRead More
Comments are Closed