রামপুরায় ২ শিশু হত্যা : মা-বাবা, খালা আটক

রাজধানীর রামপুরায় দুই ভাইবোনের নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের মা-বাবা ও খালাকে আটক করেছে র্যাব। আটককৃতরা হলেন শিশু দুটির বাবা আমান উল্লাহ, মা মাহফুজা মালেক ও খালা আফরোজা মালেক মিলা।বুধবার সকাল ১১টায় জামালপুর শহরের নতুন হাইস্কুল মোড় এলাকা থেকে অধিনায়ক মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল তাদের আটক করে। আটকের আগে তাদের ঘণ্টাব্যাপি জিজ্ঞাবাদ করা হয়েছে।এরপর আটককৃতদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে র্যাব-৩।
ঢাকার র্যাব-৩-এর কমান্ডিং অফিসার সরোয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের একটি টিম জামালপুর গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ঢাকার র্যাব-৩-এ আনা হচ্ছে।’ দুই সন্তান নুসরাত আমান (১২) ও আলভী আমানের (৬) মরদেহ মর্গে রেখে বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় এবং মামলা না করায় এ ঘটনা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
গত সোমবার বনশ্রীর বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় দুই শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সেসময় খাবারের বিষক্রিয়ায় দুইশিশু মারা গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা এটাকে হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছেন।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসকরা বলেন, দুই ভাইবোন নুসরাত জাহান অরুনী (১২) ও আলভী আমানের(৬) গলায় আঙুলের ছাপ, শরীরের কয়েক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও জখম আছে। আঘাতজনিত কারণ ও অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তবে শিশু দুটির বাবা আমান উল্লাহ ও মা মাহফুজা মালেক জেসমিন দাবি করেন, বনশ্রীর এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে সোমবার দুপুরে নুসরাত ও আলভী বাসায় ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর আর জেগে ওঠেনি। বিষক্রিয়ায় তারা মারা গেছে। মা-বাবা এ দাবি করলেও সোমবার রাতে হাসপাতালে তাদের আচরণ ছিল রহস্যজনক। আর মঙ্গলবার সকালে তারা হাসপাতালে সন্তানদের লাশের কাছে না গিয়ে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে চলে যান। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করতেও রাজি ছিলেন না। পুলিশের চাপের মুখে সম্মতি দেন। এ নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
পরিবারের দাবির ভিত্তিতে ওই চাইনিজ রেস্টুরেন্টের তিন কর্মচারীকে সোমবার রাতে আটক করে রামপুরা থানা পুলিশ। দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার পুলিশ তাদের আদালতে পাঠিয়েছে। তারা হলেন- রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান, বাবুর্চি আসাদুজ্জামান ওরফে রনি ও আতাউর রহমান।
গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। তবে ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ার পর দুই শিশুর গৃহশিক্ষিকাসহ পাঁচজনকে র্যাব ৩-এর সিপিসি-১ (খিলগাঁও) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির ৫/এ ফ্ল্যাটে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা হাসনাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন আমান উল্লাহ। তিনি বাড্ডায় গার্মেন্ট এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। তার মেয়ে নুসরাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিদ্ধেশ্বরী শাখায় ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ও ছেলে আলভী বনশ্রীর হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র। সোমবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে তাদের অচেতন অবস্থায় প্রথমে আল-রাজী হাসপাতালে ও পরে রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। দুপুরে দুই শিশুর চাচা আবুল হোসেন লাশ গ্রহণ করেন এবং গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, আঘাতজনিত কারণে তাদের (নুসরাত ও আলভী) মৃত্যু হয়েছে। তাদের গলায় আঙুলের ছাপ এবং জিহ্বায় কামড় দেয়া অবস্থায় ছিল। শরীরের ছয় স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। এটি হত্যাজনিত মৃত্যু। ভিসেরা সংগ্রহ করে রিপোর্টের জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ফরেনসিক বিভাগের ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, মেয়েটি ও ছেলেটির গলায় এবং পায়ে জখমের চিহ্ন দেখেছেন তারা। তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেভাবে বলব না। তবে অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
Related News

একুশে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা
এ বছরের একুশে পদক দেওয়া হবে শনিবার। বেলা ১১টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক হস্তান্তরRead More

যেকোনো আঘাত মোকাবিলার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যখনই দেশ এগিয়ে যেতে থাকে, যখন মানুষ ভালো থাকার স্বপ্ন দেখতেRead More
Comments are Closed