যে কোনো সময় নিজামীর ফাঁসি

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি যে কোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে। রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় সোমবার কারাগারে পৌঁছানোর পর ফাঁসি কার্যকরে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। নিজামীকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। এখন নিজামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করার সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের নির্ধারণ করা সময়ে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে।
বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে চার বিচারপতির সবাই সই করেছেন। এরপর রায়ের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ট্রাইব্যুনালে পা?ঠায়। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সেখান থেকে সন্ধ্যায় লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। জেল সুপার জাহাঙ্গীর আলম রায়ের কপি গ্রহণ করেন। তিনি এখন প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। গত রবিবার রাতে মতিউর রহমান নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ মে (বৃহস্পতিবার) আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে বাহিনীর সঙ্গে তিনি নিজে শুধু অংশগ্রহণ করেননি বরং দলের নেতাকর্মীদের উত্সাহিত করেছেন। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে রিভিউর নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু রিভিউ গ্রহণ করার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। মতিউর রহমান নিজামী যে তিনটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন, সেই তিনটি অভিযোগেই শুধু রিভিউ করেছেন এবং দণ্ড কমানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু রিভিউ গ্রহণ করার মতো ব্যতিক্রমী কোনো যুক্তি পাওয়া যায়নি। বরং বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে তার সরাসরি অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরো বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী গণহত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে নিজামী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার আইনজীবী দণ্ড কমানোর আবেদন করেছিলেন। এতে প্রমাণিত হয়, নিজামী নিজের দোষ স্বীকার করেছেন।
বাকি শুধু প্রাণভিক্ষার সুযোগ
দণ্ড কার্যকরের আগে যুদ্ধাপরাধী নিজামীর শেষ আইনি সুযোগ ছিল রিভিউ আবেদন। তা খারিজের মধ্যদিয়ে আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে। এখন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে শেষ সুযোগে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। আসামি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবে।
রিভিউ খারিজের পর স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা কাশিমপুরে গিয়ে নিজামীর সঙ্গে একবার সাক্ষাত্ করেছেন। তবে সে সময় তারা নিজামীর প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
গত ২৯ মার্চ মতিউর রহমান নিজামী রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এরপর ৩ মে আবেদনের শুনানি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শেষ হয়। ৫ মে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করে সর্বোচ্চ আদালত।
হত্যা, গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবরে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে নিজামী আপিল করার পর, গত ৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত চার জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই দিনে, গত বছরের ২১ নভেম্বর।
ফাঁসির প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। এশীয় অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, মৃত্যুদণ্ড একটি নির্মম শাস্তি। যেকোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে এইচআরডব্লিউ।
Related News

কালীগঞ্জে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে প্রধান শিক্ষককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়
ঝিনাইদহঃ সরকারী নির্দেশ অমান্য করার অপরাধে কিন্ডার গার্ডেন পরিচালনার অভিযোগে ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষককেRead More

গাজীপুরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারে ৬ জনের অর্থদন্ড
গাজীপুরে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের দায়ে ৬ জনকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেছেRead More
Comments are Closed