News Bangla 24 BD | আলু রোপণ যন্ত্রের ব্যবহার কৃষকের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে
News Head

আলু রোপণ যন্ত্রের ব্যবহার কৃষকের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আলু রোপণ যন্ত্রের ব্যবহার কৃষকদের মাঝে যেমন সাড়া জাগিয়েছে তেমনি বেশ জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। আলু বাংলাদেশের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্য। বিগত বছরগুলোতে আলুর ব্যপক ফলন হযেছে যা দেশের চাহিদার চেয়েও বেশি। কিন্তু মৌসুমে দাম কম থাকায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখেতে পারেনি। এর অন্য আরেকটি কারণ হলো যে, আলু চাষে প্রচুর বিনিযোগ করতে হয়। আমাদের দেশে আলু চাষের জন্য চাষটি পাওয়ারটিলার দিয়ে দিলেও অন্যান্য কাজ যেমন: লাইন করা, একটি একটি করে বীজ নির্দিষ্ট দুরত্বে ফেলা, আলুকে ঢেকে দেয়া, বেড তৈরি করার কাজগুলো হাতে শ্রমিকের সাহায্যেই করা হয়ে থাকে। শ্রমিকের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ও শহরমুখী নানাবিধ পেশার দিকে ঝুকে পড়ায় মৌসুমের সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা যেমন কঠিন হয়ে পড়ছে তেমনি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আলু চাষে কৃষকের কষ্ট কমাতে ও শ্রমিক সাশ্রয় করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্ট হারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে পাওয়ার টিলার চালিত আলু রোপণ যন্ত্র উМাবন করা হয়েছে। পাওয়ার টিলার চালিত এ যন্ত্র একবারেই লাইন তৈরি করে, লাইনে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ দেয়, আলু ঢেকে দেয় ও বেড তৈরি করে। এ যন্ত্রটি ৬০ সে. মি. চওড়া বেড তৈরি করে যার উচ্চতা হয় ১২-৪ সে. মি.। যন্ত্রটিতে ২০টি বেøড বা ফাল থাকে যা এক বিশেষ পদ্ধতিতে সাজানো হয় ফলে মাটি দুই পাশ থেকে মাঝের দিকে যায়। দুইটি ডিস্ক দুই পাশ থেকে মাটিকে আরো গুছিয়ে আনে ও পেছনের বেড শেপার মাটিকে চাপ দিয়ে সুন্দর বেড তৈরি করে দেয়। যন্ত্রের মাঝ বরাবর একটি ফারো ওপেনার আছে যা উচু নিচু করে বীজ গভীরতা কম বেশি করা যায়। বীজ হপারে ২৮-৪০ মিমি সাইজের আলু বীজবা বড় বীজকে কেটে কাঙ্খিত আকার করে ঢেলে দেয়া হয়। কাপ পদ্ধতির মিটারিং ডিভাইস দ্বারা একটি একটি বীজ ২৩-২৫ সেমি দূরত্বে পড়তে থাকে। এলুমিনিয়ামের তৈরি বীজ কাপগুলো প্রয়োজনের বীজের আকারের ভিন্নতার অনুসারে পরিবর্তন করে নেয়া যায়। এক হেক্টর জমির আলু যেখানে হাতে লাগাতে ৬৭ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় সেখানে যন্ত্র দ্বারা লাগতে মাত্র ৪ জন শ্রমিক লাগে । হাতে আলু লাগালে হেক্টরে খরচ হয় ১৬৯০০ টাকা কিন্তু বারি আলু রোপণ যন্ত্র দিয়ে আলু লাগাতে খরচ হয় হেক্টরে মাত্র ৪৮০০ টাকা। বারি আলু রোপণ যন্ত্র ব্যবহারে ৯৭% শ্রমিক ও ৬৭% আলু রোপন খরচ কমানো যায়। যে কৃষকের পাওয়ারটিলার রয়েছে তিনি আর মাত্র ৫৫০০০ টাকা দিয়ে যন্ত্রটি কিনে ব্যবহার করতে পারবে। যন্ত্র চালাতে ঘণ্টায় মাত্র ১.৫ থেকে ২ লিটার ডিজেল লাগে। যন্ত্রটির দ্বারা এক বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতে ১-১.৫ ঘন্টা সময় লাগে। একজন চালক ও বীজ সরবরাহের জন্য একজন সহকারী দ্বারা যন্ত্রটি দিনে ৬-৮ বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করতে পারে। কৃষকরাও আলু চাষে লাইন করা, একটি একটি করে বীজ নির্দিষ্ট দূরত্বে ফেলা, আলুকে ঢেকে দেয়া, বেড তৈরি করার কাজগুলো হাতে শ্রমিকের সাহায্যেই করে থাকে কিন্তু যন্ত্র দ্ব্ারা এক সাথে করার সুবিধা থাকায় কৃষকরা খুবই খুশি। বারি আলু রোপণ যন্ত্র রাজশাহী, পঞ্চগড়, গাজীপুর, বগুড়া, যশোর ও দেশের অন্যান্য এলাকার গবেষণা মাঠে ও কৃষক মাঠে ব্যবহার ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সাথে চুক্তিভুক্ত যন্ত্রপ্রস্তুতকারীরা ইতিমধ্যে এ যন্ত্র তৈরি ও বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। পাওয়ার টিলার চালিত এই আলু রোপণ যন্ত্রটির কার্যকারিতা কৃষক মাঠে দেখানো প্রয়োজন। এছাড়া বারি উМাবিত আলু উত্তোলন যন্ত্রও রয়েছে যা অত্যন্ত শ্রমিক সাশ্রয়ী। যন্ত্র দুটোর ব্যপক প্রচার প্রচারনা ও মাঠ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারলে সময় ও শ্রমিক সাশ্রয়ী এ যন্ত্রটি দ্বারা কৃষক উপকৃত হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ