News Bangla 24 BD | টঙ্গীতে কাল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
News Head

টঙ্গীতে কাল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু


টঙ্গী প্রতিনিধি : টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী কাল অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ওই দিন ফজর নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুই পর্বের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার আলমী সূরার তত্তাবধানে সূরায় নেজাম অনুসারীদের প্রথম পর্ব। গত মঙ্গলবার থেকে মাঠে ট্রেনে, বাসে, ট্রাকে ও বিভিন্ন যাবাহনে চরে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দলে দলে মসুল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। তারা তাদের জন্য জেলা ওয়ারী নির্ধারিত ক্ষিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
এদিকে তুরাগ নদের তীরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কর্ম চাঞ্চল্যের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শেষ প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও। তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আলাদা ভাবে। তবে দু’ধাপেই অংশ নেবে ৬৪ জেলার মসুল্লিরা। এবার কোনও পক্ষেরই পাঁচ দিনের প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ ‘জোড়’ ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আলমী সূরার মসুল্লিরা (মাওলানা জুবায়ের পক্ষ) ইজতেমা পালন করবেন ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১২ জানুয়ারি (রবিবার) শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা। ৪ দিন বিরতি দিয়ে সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি (রবিবার) সমাপ্তি ঘটবে ২০২০ সালের ৫৫তম বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মহাসম্মেলন তথা এবারের বিশ্ব ইজতেমা। গতকাল বুধবার ৮ জানুয়ারি সকালে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চট টাঙানোর কাজ প্রায় শেষ, মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, কিছু অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে, সেচ্ছা শ্রমে বালু দিয়ে মাঠ সমান করা হয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ তাঁবু টাঙানো, নামাজের লাইন তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়েছেন। দলবদ্ধ হয়ে ভাগ করে ইজতেমার শেষ প্রস্তুতির কাজ করছেন তারা। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সাতটি ভাসমান সেতু তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়া বিদেশি মুসল্লিদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে তুরাগ তীরে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। বিদেশী আবাসনের পশ্চিমে তুরাগ নদের পাড়ে তাদের রান্নার জন্য রন্ধনশালা নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইতোমধ্যে ময়দানে তাঁবু টাঙানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা ময়দানে দ্রুত কাজ করছেন। সার্বিক কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন।
মুসুল্লিরা যে ভাবে খিত্তাওয়ারী অবস্থান নেবেন : এবছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০, ৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬৫), সুন্দরবন (খিত্তা-৬৬), ফেণী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর-এর খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে। এছাড়াও ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২ ও ১৫(খ) নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম : গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের অভিনন্দন ও স্বাগত জানানোর জন্য ১৫টি তোরণ নির্মাণ করেছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্যে ইজতেমা ময়দানে ১৩টি গভীর নলকূপের দ্বারা ১৮.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। বহুতলীয় দালানে প্রায় ৮ হাজার ৩‘শ ৩১ টি স্থায়ী, ৪‘শ টি অস্থায়ী ও বিদেশী মেহমানদের জন্য ১‘শ ৭৫টি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্থ্য অজু গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমাস্থলের আশপাশে প্রায় ২ সহ¯্রাধিক কাঁচা অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ৬‘শ ড্রাম বি¬চিং পাউডার ও ২ হাজার লিটার কেরোসিন সরবরাহ করা হয়েছে। ৬০ টি ফগার মেশিনে মশক নিধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তুরাগ নদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে নৌযান চলাচল বন্ধের লক্ষে টঙ্গী ব্রিজ ও কামাড়পাড়া ব্রিজের নিচে বাঁশ দ্বারা ৩টি নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি, ১‘শ ১ টি ল্যাম্পপোষ্টের মাধ্যমে ৫‘শ টি সড়ক বাতি লাগানো হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৪৫ টি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ইজতেমা চলাকালে প্রতিদিন ৬০টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপরাসণ কার্যক্রম চালানো হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রাস্তার উপর পার্কিং করা গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সিনেমা হল বন্ধ এবং ইতিমধ্যে রাস্তার দু’পাশে দেয়ালের অশ্লীল পোষ্টার অপসারণ করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের চারপাশের রাস্তার ধূলাবালি নিয়ন্ত্রনে পানি ছিটানোর জন্য গাসিকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশের সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করার লক্ষে ৮টি কন্ট্রোল রুম, পুলিশের জন্য ১৫টি ও র‌্যাবের জন্য ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের চার পাশের সকল অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যে গুলো বাকি রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার টঙ্গীর বিভিন্ন বস্তিগুলোতে মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব বিষয় মনিটরিং করার জন্য সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারির সমন্বয়ে ১৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একটি বিশেষ সূত্র জানায়, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতৃবৃন্দ ছত্রছায়ায় ইজতেমা ময়দানের উত্তরে নিউ মন্নু টেক্স্রটাইল মিলস প্রাঙ্গন, নিউ অলিম্পিয়া, হোন্ডা রোড, আই আর আই রোড এলাকায় অস্থায়ী ভাবে বাজার বসিয়ে ভিট প্রতি ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রতিদিন ভাড়ায় বিভিন্ন পন্য-সামগ্রীর দোকানপাট এবং আলাদা ভাবে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবসা বসাতে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও হারবাল, ইউনানী ও কবিরাজী দাওয়াখানার নামে ভূয়া ঔষধ বিক্রেতা প্রতারক চক্র বিভিন্ন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ বালাই ভালো করার দোহাই দিয়ে ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সরলতার সুযোগে প্রতারনা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পায়তারা চালাচ্ছে। প্রতি বছর ইজতেমাস্থলের চতুর্পাশে এদের দৌরাত্ব লক্ষ করা যায়। এগুলো বন্ধ করতেও দাবী জানিয়েছেন ইজতেমা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃংখলা জোরদার করা হয়েছে। ৫ সেক্টরে ভাগ করে ৫ স্তুরের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি স্তর বা সেক্টরের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই দু’পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ১০ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৪ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের করা হয়েছে। ২০টি প্রবেশ পথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগল্স, পুলিশ ও র‌্যাবের ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসলিল্লদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল ও বিশেষ নিরাপত্তা যন্ত্র আর্চওয়ে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোন প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেক পোষ্ট, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য ২টি পয়েন্টে হ্যালিপ্যাড ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং এর জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও ৮টি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। তারা ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষনিক নজর রাখবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র‌্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষনিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।
ময়মনসিংহ জেলার মুসল্লি মো.আক্রামুল ইসলাম খান বলেন, ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে পারলে নিজেকে পূন্যবান মনে হয়, তাই স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানের কাজ করতে এসেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই ময়দানের কাজ করতে আসব। আল্লাহ’র কাজ করলে মনে শান্তি আসে।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লি¬দের প্রতি পুলিশের আহ্বান : ১০ থেকে ১২ এবং ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি দু’পর্বে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক আহ্বান জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক মুসল্লিদেরকে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান, অপরিচিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং কোনো পোঁটলা, ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তুর দেখামাত্র আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে করা, টাকা বা মূল্যবান সামগ্রীসহ একাকী বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফেরা না করা, সব সময় টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিজ হেফাজতে রাখা, হকার ও ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করে স্থায়ী দোকানের খাবার খাওয়া, টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি বা খোয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ বা র‌্যাবকে জানানো জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিদেশী মুসল্লিদের প্রতি সতর্কতা : গত বিশ্ব ইজতেমায় মুসলিম বিশ্বের যে ১০টি দেশের নাগরিকদের ময়দানে আসা-যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা আরোপ করা হয়েছিল তা শিথিল করা হয়েছে। তবে কোন বিদেশী মুসল্লির সঙ্গে রিটার্ন টিকিট না থাকলে তাদের বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেবে না সরকার। ইজতেমায় আসা পাকিস্থানসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতেও রাখবে গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের অনুমতি ছাড়া ইজতেমা শেষে কোনো বিদেশী মুসল্লি¬ দেশের ভেতরে চিল¬ায় যেতে পারবেন না। গত বারের চেয়ে এবারের ইজতেমায় আরো বেশী বিদেশী মুসল্লি অংশ গ্রহন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক নিবাসে মেহমানদের রান্না-বান্নায় বিশেষ নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। যাতে তাদের ফুড পয়জনিং না হয়।
মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, হৃদরোগ ইউনিট, বক্ষব্যাধি/ এ্যাজমা ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ণ ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ : ইজতেমা মাঠের উত্তরপার্শে নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলের মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে ১০ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়দানে আসা অসুস্থ্য মুসল্লিদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিতরণ করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এছাড়াও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র‌্যাব, জেলা প্রশাসনসহ ৪৫টি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টলে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করবে। এসব স্টলগুলো উদ্বোধনকালে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. আজমত উল্লা খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সামসুন্নাহারসহ রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ইজতেমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা : টঙ্গী ডেসকো সূত্রে জানা যায়, ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারনে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব-স্ব স্থানে ৪টি সাব স্টেশন ও ৫ টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের জোন-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো.মানিকুজ্জামান জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষনিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ৬টি টু-হেলার মোটর সাইকেল টহল, ১৪ টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, ১ টি ষ্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট, ৬ টি মোবাইল জেনারেটর, প্রতি খিত্তায় ২জন ফায়ারম্যান থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, এবং ৩ টি এ্যাম্বুল্ন্সে, ১টি রেসকিউ বোর্ড, ১টি রেসকিউ গাড়ী থাকবে, ২টি ফায়ার এক্সিট্রিম হুইসার । ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকবে।
বিশেষ ট্রেন ১৬টি : টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের ষ্টেশন মাষ্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য ১৬টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সব ট্রেন ৫ মিনিট পর্যন্ত টঙ্গী ষ্টেশনের দাঁড়াবে। সাপ্তাহিক বন্ধের সকল ট্রেনও ওই সময়ে চলাচল করবে। এছাড়াও প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম : কামারপাড়া হতে সূইচগেট পর্যন্ত তুরাগ নদের সীমানা পিলার থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে গড়ে তোলা সকল ধরনের অবৈধ স্থাপনা ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। অবশিষ্টদেরও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. মাহফুজ হান্নান জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বাকী টুকিটাকি যা আছে তা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ১০ থেকে ১২ জানুয়ারী ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লি¬রা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশি¬¬ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে আয়োজিত তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমা। তিনি আরও জানান, আগত ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার এক শ্রেনীর পাইকারী মজুদদার ব্যবসায়ীরা দ্বি-গুন অর্থ উর্পাজনের প্রত্যাশায় কাঁচা তরী-তরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যদ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারজাত করছে। বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বীরা এসব কালো বাজারী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
টঙ্গী মডেল থানার অফিসার মো. কামাল হোসেন জানান, টঙ্গীর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার জানান, টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় আইনশৃংলা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রতিবারের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণ ভাবে বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন হবে ইনশাল্লাহ।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পঁচাবাসী খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনসহ তাদের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশা পাশ জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও আনছার বাহিনী থাকবে। এ বারের ইজতেমায় সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য থাকবে তার সাথে ৫ স্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবার ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় কোন দোকান বসতে পারবেনা। ইতিমধ্যে ফুটপাত ও রাস্তার সব দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, অনুষ্ঠিতব্য টঙ্গীর বিশ্বইজতেমার সকল কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে ইজতেমার প্রস্তুতিসহ এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, ইজতেমা মাঠে যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তার দু’পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা, মশক নিধন, অশ্লীল পোষ্টা-ব্যানার অপসারণসহ অন্যান্য কাজ রয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ জাহিদ আহসান রাসেল জানান, বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে এবং অতীতের ন্যায় মুসল্লিদের সেবা প্রদানে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ