News Bangla 24 BD | আজ গাজীপুর সিটি নির্বাচন: কে হচ্ছেন নগরপিতা
News Head

আজ গাজীপুর সিটি নির্বাচন: কে হচ্ছেন নগরপিতা


অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষা ও রাজনৈতিক মহলের নানান হিসাব-নিকাশের অবসান ঘটিয়ে আজ মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সিটির ৪২৫টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশনের এটি হলো দ্বিতীয় নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৫ মাস আগে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে গাজীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। পাশাপাশি কোন দলের থেকে কে হবেন নগরপিতা এ নিয়ে চলছে ব্যাপক নিসাব-নিকাশ ও চুলচেরা বিশ্লেষণ। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে আজকের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্য মর্যাদা লড়াই বলে ধারনা হচ্ছে। নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূলত মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে। আওয়ামীলীগ বাহ্যতঃ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠে কম তৎপর দেখা গেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অভিমত প্রচার প্রচারণা ও সাংগঠনিক তৎপরতায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। সব মিলিয়ে আজ ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে গাজীপুর সিটি মেয়র হিসাবে আওয়ামী লীগের নাকি বিএনপির প্রত্যাবর্তন। আর এ প্রশ্ন এ সিটির সর্বত্রই। আওয়মী লীগের তরুণ প্রার্থীর গ্রহণ যোগ্যতা এবং তার মাধ্যমে নগরীর উন্নয়ন আর বিএনপির প্রবীন প্রার্থীর দক্ষতা ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বিবেচনা করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা এমন ধারণা নগরবাসীর। তবে শেষ পর্যন্ত কে জিতবেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে দেশবাসীকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত অথাৎ ভোাট গনণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য এবারের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই দলের কাছেই জয় পরাজয় প্রেষ্ট্রিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সে কারণে এবারের নির্বাচনের দ্বিতীয় প্রচার-প্রচারণা গত ১৮ জুন থেকে শুরু হবার পর থেকেই ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটের মাঠে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধের বিষয়টিই ছিল লক্ষ্যনীয়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নির্বাচনী আচণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগও করেছেন। তাদের এ অবস্থানে সাধারণ মানুষ ও কর্মীদের মধ্যে এক ধরণের শংকা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেছেন ভোটের আগের রাতে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দল। তিনি বলেন পুলিশের নেতৃত্বে রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। একটি সুন্দর নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেয়ার অপচেষ্টায় মরিয়া সরকারী দল। অবশ্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করা হয়েছে।
পাশাপশি অপর আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থীর প্রধান সমন্নয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আজমত উল্লাহ খান বলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীর একটি কাজ সকালে উঠে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো। কিন্তু তিনি এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্বাচনে কোন সুফল আনতে পারবেন না।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন পুলিশ বিএপির কোন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করছে না। বিএনপি প্রার্থী পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটানিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য যে কোন সিটি নির্বাচনের তুলনায় গাজীপুরে অধিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোন ধরণের অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহনচলবে। ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৩৭টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে। এবার মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করবে। এছাড়া ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । তবে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই কাউন্সিলর পদে বিনাপ্রতিদ্ধন্দীতায় মাজহারুল ইসলাম দিপু নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। এবার এর দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। ১৫ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ এবং পরে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন থেকে পুনরায় ২য় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় এবং সে অনুযায়ী ২৬ জুন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষেগাজীপুরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। একারণে নগরীর পরিবেশ ছিলো একেবারেই শান্ত। গতকাল প্রায় সারাদিনই প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান উদ্দিন সরকার বাসায় অবস্থান করেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে গাজীপুরে যানবাহন চলাচলে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিধিনিশেষ আরোপ করেছে। একারনে আঞ্চলিক সড়কের গতকাল যানবাহন চলাচল কম। এছাড়া বহিরাগতদের অবস্থানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বহিরাগতদের অবস্থানের ব্যাপারে নিষেধজ্ঞা থাকায় সিটি এলাকায় কেন্দ্রীয় ও ভিআইপিদের আগমন বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আঞ্চলিক সড়কে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন।
কেন্দ্রে নিরাপত্তায় ১২ হাজার আনসার ও পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছাড়াও সড়কে সড়কে টহল জোরদারের লক্ষে বিজিবির ২৯ প্লাটুন সদস্য কাজ করছে । বিজিবির ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় এবং ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসার সমন্বয়ে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৮টি মোবাইল ফোর্স, ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত আছে।
প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। এবার এর দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। ১৫ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ এবং পরে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন থেকে পুনরায় ২য় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় এবং সে অনুযায়ী ২৬ জুন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৪২৫টি যার মধ্যে ৮০ ভাগ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে ৭ জন মেয়র ছাড়াও ৫৭টি ওয়ার্ডে ২৫৪জন কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।

৪২৫টি কেন্দ্রের ৩৩৭ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র রয়েছে ৩৩৭টি। আর ৮৮টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য থাকবে পুলিশের টহল দল ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। সব মিলিয়ে ভোটের দিন প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। অপরদিকে পুলিশের ১৯টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ২০টি টহল টিম এবং ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।

শান্তিপুর্ন্যভাবে ভোট গ্রহন চলছে। এই রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ